Suleimani Tea
পয়গম্বর ও তার সুলেইমানি চা
নিজেকে কখনোই খাদ্য বিশারদ মনে করি না, আর পেয় বিশারদ তো না-ই। সকালে ঘুম ভাঙার পর একটু কড়া করে Second Flush হলেই আমার ঝিমুনি তাড়ানোর জন্য যথেষ্ট আর সন্ধ্যেবেলা ছাত্র পেটাতে বসলে হালকা First Flush - জীবনে এর থেকে বেশি দাবি নেই আমার। আপাতত একবারই Tea Tasting এ অংশগ্রহণ করেছি। দার্জিলিং ম্যালের পাশে Nuthmul's এর ভুবন বুঝিয়েছিল কোন চায়ের সঙ্গে কোন 'টা' ভালো যায়। এই যেমন White Tea এর সঙ্গে cookies বা toast ভালো যায়, আবার green tea এর সঙ্গে sandwich এর যুগলবন্দি বেশ সুন্দর, first flush ও pastry-র এবং second flush এর সাথে brownies এর প্রেম অনবদ্য। ব্যস, চা বলতে আমার এইটুকুই জ্ঞান।
আগেও অবশ্য চা ভারতে ব্যবহৃত হতো তবে তা ব্যবসায়িক রূপে বা ব্যাপক হারে নয়। 1662 খ্রিস্টাব্দে Mendelslo একটা লেখার উল্লেখ পাওয়া যায় Achaya K. T. এর লেখা বই Indian Food A Historical Compd Dranion -এ।
At our ordinary meetings day we took only thay, which is d commonly used all over the Indies, not only among those of the country, but also among the Dutrch and the English, who take it as a drug that cleanses the stomach, and digests the superfluous humours, by a temperate heat particular thereto.
এছাড়াও 1689 সালেrর Ovington এর রেকর্ড থেকে আমরা জানতে পারি গুজরাটের ব্যবসায়ীরা চায়ের সাথে বিভিন্ন মশলা মিশিয়ে তারা মাথাধরা থেকে শুরু😀😁 করে বদহজমের উপশমের জন্য ব্যবহার করত।
Courtesy: MorningChores |
1780 সাল নাগাদ Robert Kyd চীনের চা গাছ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন। এর কয়েক দশক পর Robert Bruce নামের আরেক ইংরেজ লক্ষ্য করলেন ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে বেশ কিছু চা গাছ জংলার মত বেড়ে উঠছে কিন্তু আসামের গরমে চীনের চা গাছ বেঁচে থাকতে পারছে না। এর মধ্যে আরেক ইংরেজ, তারও নাম রবার্ট, তবে পদবি Fortune - 1851 সাল অবধি লন্ডনের Royal Horticulture Society র হয়ে চীনে থেকে চা নিয়েই গবেষণা করে দার্জিলিঙে চায়ের চাষ শুরু করেন চীনের থেকেই চা শ্রমিক আনিয়ে। আমরা এখন যে দার্জিলিংয়ের চা খাই, তার উৎস কিন্তু চীনই। এরই মধ্যে 1823 সালে আসাম থেকে চা রপ্তানি হয় ইংল্যান্ডে। এভাবেই গবেষণা ও চাষ সমান্তরালভাবে চলা শুরু হয় এবং ব্রিটিশদের প্রভাবে কলকাতায় চায়ের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে বাঙালি তথা ভারতীয়দের মধ্যে।
Courtesy: gardeningknowhow.com |
Statue of Lu Yu in Xi'an Courtesyee see t ee পাওয়া গেছে। তবে Tang dynasty (618-906 AD) থেকে চায়ের জনপ্রিয়তা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। অষ্টম শতাব্দীতে চা নিয়ে Lu Yu প্রথম বই লেখেন Ch'a Ching (The Classic of Tea)। জা বিএনপি ক্ররপান থেকে যেসব বৌদ্ধ সন্ন্যাসী পড়াশোনা করতে আসে তারা তাদের সাথে জাপানে চা নিয়ে যায়। শুধু এশিয়া নয় ইউরোপেও চা পৌঁছেছিল চীন থেকেই। লন্ডনে 1658 সালের সেপ্টেম্বর মাসে Mercurius Politicus পত্রিকায় চায়ের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে চা-কে 'China Drink, called by the Chinese, Tcha, by other Nations Tay alias Tee' বলা হয়। |
প্রথমদিকে চীনারা যে চা খেতেন তার পুরোটাই ছিল green tea, সপ্তদশ শতকের পর থেকে চায়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার জন্য চা উৎপাদকদের তাদের পণ্য সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ভবিষ্যতের জন্য বা বার চাহিদা অনুযায়ী চায়ের জোগান দেওয়ার জন্য চা পাতাকে শুকিয়ে রাখা হতো। আর সেখান থেকেই জন্ম নিল black tea।
Courtesy: pinterest.com |
সহজ কথায় ত্যাগ প্রচলন চীন থেকেই শুরু হয়েছে আই ই উচ্চ কষমতাসম্পন্ন vçy তিন এবং তা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সেই চা পাতার সাথে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে শুরু করে হরেকরকম নতুন খাদ্যবস্তুর সংযোজন হয়। আজ তারই এক প্রকারভেদের গল্প বলি যা স্বয়ং পয়গম্বর মহম্মদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। নবী একধরনের বিশেষ পানীয় পছন্দ করতেন, যার নাম গাভা (ghava), অনেকে এটাকে কাহ্ওয়া(qahwa) ও বলে থাকেন। গাভা মূলতঃ একটি গরম পানীয় যার মধ্যে দারুচিনি, লবঙ্গ মেশানো থাকে এবং তাতে মিষ্টতা আনার জন্য থাকে খেজুর। এটাকে গাভার প্রারম্ভিক সংস্করণ বলা যেতে পারে। এবারে কালের পরিবর্তনের সঙ্গে আরবের ব্যবসায়ী আর আক্রমণকারীদের হাত ধরে মধ্য এশিয়া থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে গাভা ছড়িয়ে পড়তে থাকে এবং এর সঙ্গে স্থানীয় মশলা মিশতে থাকে। এই যেমন হায়দ্রাবাদের বারকাস অঞ্চলে যেখানে সপ্তদশ শতকে ইয়েমেনের হাদরামাউট শহর থেকে আগত আরবীদের ঘনবসতি আছে, তারা গাভাতে গরম জলে কফি বীজের সঙ্গে এলাচ ও দারুচিনি মিশিয়ে পানীয়কে গাঢ় করে পরিবেশন করে। কেউ আবার তাতে সুগন্ধী আনার জন্য গোলাপ জল যোগ করে। আরবের যে গাভা ছিল, তাতে কখনোই চিনি আর দুধ থাকতো না, মিষ্টির জন্য দেওয়া হতো খেজুর। কিন্তু এখানে খরিদ্দারের চাহিদায় খেজুরের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে আরো মিষ্টি করার চেষ্টা করা হলো, পানীয়কে আরো গাঢ় করার জন্য দুধেরও ব্যবহার হলো কোথাও কোথাও। কেউ আবার দুধের সাথে শুকনো আদা ও অন্যান্য মশলাও যোগ করলো। এক কথায় আরবের গাভার খোল নলচেই পাল্টে গেল হায়দ্রাবাদে এসে।
Courtesy: archaskitchen.com |
ঠিক এভাবেই আরবের ব্যবসায়ীরা যখন মালাবার উপকূলে আসলো, সেখানেও গাভা আবার রূপ পরিবর্তন করলো। দেশ এক, কিন্তু প্রদেশ আলাদা, জীবনশৈলী আলাদা বলে তাদের উপকরণও আলাদা হয়ে গেল। এখানে কফির বদলে এলো ব্ল্যাক টি, সঙ্গে জুড়লো লেবুর রস। তাদের সাথে গোলমরিচ, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি তো আছেই। যেহেতু এখানে লেবু দেওয়া হয়েছে তাই দুধ যোগ করার মত ভয়ানক কাজ করার সাহসটা কেউ দেখায় নি।
Courtesy: Cooking from Heart |
এবার ছোট্ট করে লেখার উপসংহার টানি, সুলেইমানি চায়ের উপকারিতা লিখে -
১। গুরুপাক মানে ভারী খাবার খেলে তা হজম করতে সুবিধা হয়।
২। চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর খুব সুন্দর করে মুখ পরিষ্কার করে। পাকিস্তানের বালুচিস্তান, করাচি ইত্যাদি অঞ্চলে মহিষের চাপলি কাবাব খাবার পরে ওরা কিন্তু কাহ্ওয়া খাবেই।
৩। ঠান্ডা বা সর্দি কাশির সময় সেবনে শ্লেষা আটকে থাকা নাক ও গলা খুলে দেয়।
সুলেইমানি চা খেয়ে আমি মূলতঃ এই তিনটে উপকার পেয়েছি। এছাড়া চায়ের না গুনাগুন আছে, সেগুলো তো এর মধ্যে বিদ্যমান, যেমন- anti oxidant, anti ageing ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো লিখে আপনাদের পড়ার সময় আর দীর্ঘায়িত করলাম না।
এবারে একদম শেষ লাইন - আমার ঘরের খাবার পোষায় না। ঘরে খাওয়া দাওয়া আমার কমই হয়। সব সময় চেষ্টা করি বাইরে নানা রকমের খাবার খেতে আর তার ইতিহাস খুঁজে বার করতে। এরকম করেই কলকাতায় আমি প্রথম সুলেইমানি চা খেয়েছি কালিকাপুরের Café Porkotini-তে। এটা ছাড়া বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় যখন নানা রাজ্য থেকে আগত ব্যবসায়ীরা দোকান দেয় সেরকম একটি মেলায় কাশ্মীরের কাহ্ওয়া খেয়েছিলাম। সল্টলেকের করুণাময়ীতে সবলা মেলা, সরস মেলা এরকমই কোনো একটা মেলায় খেয়েছিলাম, মেলার নাম ঠিক মনে নেই।
Café Porkotini
Google Link :
Comments
Post a Comment