A Tale of Bangali's very own Dak Bungalow Curry

 A Tale of Bangali's very own Dak Bungalow Curry 



রানার ছুটেছে তাই ঝুম্‌ঝুম্ ঘন্টা বাজছে রাতে

রানার চলেছে খবরের বোঝা হাতে,

রানার চলেছে, রানার !রা

ত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার ।

দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-

কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার ।


রানার ! রানার !

জানা-অজানার

বোঝা আজ তার কাঁধে,

বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে;

রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,

আরো জোরে, আরো জোরে হে রানার দু্র্বার দুর্জয় ।


সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই রানার কবিতা থেকেই পুরোনো ভারতবর্ষের ডাকবিভাগের সম্পর্কে আমার প্রথম জানার শুরুটা। তখনও জানতাম না, এই ডাকবিভাগের জন্য বাংলা ও বাঙালি এক নতুন খাবারের স্বাদ পেয়েছিল। পুরো ব্যাপারটা রসিয়ে বলতে গেলে অবিভক্ত ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষে ডাকবিভাগ শুরু হয় অষ্টদশ শতাব্দীতে। এর আগে ঘোড়ারপিঠে চেপে, পায়রা দিয়ে ডাকের কাজ করা হলেও East India Company নিজেদের কাজকর্মের সুবিধার জন্য 1764 ও 1766 সালের মধ্যে পোস্ট অফিস স্থাপন করে বোম্বে,  মাদ্রাস আর কলকাতায়। এরপর গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস সাধারনের জন্য ডাকবিভাগ খুলে দেন 1774 সালে। ডাকবিভাগ স্থাপনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল East India Company র কাজে গতি আনা এবং সুষ্ঠ ভাবে দেশ চালানোর কথা না ভেবে নিজেদের সুবিধা মত ভারতবর্ষকে লুঠ করা। তারজন্য যাবতীয় সংবাদ, নথিপত্র আদানপ্রদান সবই শুরু হয় ডাকবিভাগের মাধ্যমেই।  


নথিপত্র, টাকাপয়সা ইত্যাদি আদানপ্রদানের সময় ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ভারতীয়দের ওপর ভরসা করতেন না, নিজেরাই যেতেন - সাথে কেরানী, সৈন্য সামন্তদের মধ্যে ভারতীয়রা থাকতেন। বেশি দূরের কোনো জায়গায় যেতে হলে রাতটা ওনারা পথে কোনো সার্কিট হাউসে কাটাতেন। এই সার্কিট হাউসগুলো সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মাইল দূরে দূরে হতো। 1840 সাল নাগাদ উপমহাদেশে এই সার্কিট হাউসের প্রচলন শুরু হয়। শুধু ইংরেজ পদাধিকারিক নয়, জমিদার, রাজা, বিদেশি পর্যটকরাও এখানে থাকতে পারতেন পয়সার বিনিময়ে। একজনের জন্য দিন প্রতি আট আনা ধার্য্য ছিল, আর বিবাহিত যুগলদের জন্য বারো আনা। ঘোড়ার ঘাসের খরচ, ঠাণ্ডার সময় পোড়ানোর কাঠের খরচ ও খাবার খরচ আলাদা। বিছানা একেক জন একেক রকম পছন্দ করতেন বলে রাজারা বা রাজ কর্মচারীরা নিজেদের বিছানা নিজেরা সঙ্গে নিয়েই ঘুরতেন। দুর্গম অঞ্চলে মামলা মোকদ্দমার কাজও এই সার্কিট হাউসে হতো, তার জন্য এখানে বড় হলঘর ও ছিল। সবসময়ের জন্য এখানে ডাকওয়ালা, দারোয়ান, খানসামারা থাকতেন। সিপাহী বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহীরা বেছে বেছে এই সার্কিট হাউসগুলোকেই আক্রমন করেছিলেন এখানে ব্রিটিশ পদাধিকারিক ও সৈন্যরা থাকে বলে। যখন থেকে এই সার্কিট হাউসগুলোকে কেবলমাত্র ডাকবিভাগের কাজে ব্যবহার শুরু হলো, তখন থেকে এই সার্কিট হাউসে নাম পাল্টে চলতি কোথায় ডাকবাংলো হয়ে গেল - ডাকের কাজ হয় বলে। 


ডাকবিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা যখন ঘোড়ায় চেপে আসতেন তখন দূর থেকে সেই ঘোড়ার শব্দ শোনা যেত। এই শব্দ শুনে বাংলোর খানসামা বা পরিচারক - যে থাকতো... হাতের সামনে যা পেত সেটা দিয়েই তাদের জন্য খাবারের জোগাড় করতো। কখনো মুরগী, কখনো কচি পাঁঠা বা রেওয়াজী খাসী, কখনো বা খরগোস বা হাঁস যা পাওয়া যেত সেটা দিয়েই একদম গ্রামের মাংসের ঝোল হতো। তেল, মশলার আধিক্য নেই, ঘি মাখন ব্যবহারের সামর্থ্য বা সুযোগ থাকতো না - যাকে বলে একদম সাদামাটা মাংসের তরকারি। বাংলায় যখন আলুর চাষ শুরু হলো তখন এই মাংসের ঝোলে আলু পড়ল আর  কোনো সৌখিন খানসামার হাত ধরে ডাকবাংলো কারীতে ডিমের সংযোজন হয় অথবা বলা যেতে পারে কলকাতার রেস্তোরাঁগুলো তাদের ডাকবাংলো কারীকে আরেকটু সুন্দর ভাবে পরিবেশন করার জন্য ডিমের ব্যবহার করে থাকেন। একেক জায়গার ডাকবাংলোর খানসামারা এটাকে একেক রকমভাবে রান্না করতেন। এর কোনো নির্দিষ্ট প্রনালী নেই। ম্যারিনেশন ছাড়া কম মশলা, কম তেল, কম আয়োজনের একটা রান্না - এখানে authentic বলে কিছু হয় না, যে যেমন পারে নিজের মতো করে এই ডাকবাংলো কারী বানিয়ে থাকেন। এটা রুটি, পরোটা, ভাত সবার সাথেই বেশ সুন্দর যায়। কলকাতাতে অনেকেই ডাকবাংলোকারী বানায়, তবে স্বাদের দিক দিয়ে ভজহরি মান্নার ধারে পাশে কেউ থাকতে পারেনি এখনো। ভোজহরি মান্নার সিদ্ধার্থ বাবু বলেন যে, 2003 সাল নাগাদ যখন ভজহরি মান্না শুরু হচ্ছে সেই সময় বিখ্যাত চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষের সাথে আড্ডায় ডাকবাংলো কারীর কথা উঠে আসে। আর তখন থেকেই এখানে হয়ে আসছে ডাকবাংলো কারী।


Comments

Popular Posts