Netaji Subhas Chandra Bose as a Foodie

Netaji Subhas Chandra Bose as a Foodie


নেতা আসবে, নেতা যাবে - কিন্তু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস একজনই আছেন যিনি চিরকাল থেকে যাবেন সমস্ত ভারতবাসীর মনে। ছোটবেলায় নেতাজিকে নিয়ে অনেক রচনাই লিখেছি, তবে একজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী কতটা ভোজনরসিক ছিলেন বা আমাদের মত বাড়ির বাইরে খাবার খেলে কি খেতেন? কোন দোকানে খেতেন? এসব নিয়ে কেউ কখনো কোনো প্রশ্ন করে নি, তাই লেখাও হয় নি।
আজ, নেতাজির জন্মদিন বলে ল্যাদসর্বস্ব জীবনের ল্যাদ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে লেখা শুরু করলাম। timeline আর tram line ধরেই এগোতে থাকি। শুরু করা যাক হাতিবাগান থেকে।
লক্ষী নারায়ন সাউ এন্ড সনস: হাতিবাগান থেকে স্কটিশ চার্চ কলেজের দিকে আসতে স্কটিশ চার্চ স্কুলের আগে উল্টো রাস্তায় এই লক্ষী নারায়ন সাউ এর চপের দোকান। দোকানটা প্রতিষ্ঠা করেন খেদু সাউ, 1918 সালে। নেতাজির সাথে এই দোকানের যোগসূত্র বিপ্লবী আন্দোলনের সূত্রেই। তখনকার দিনে ফাস্টফুড বলতে এই চপ মুড়ি তেলেভাজা এগুলোই ছিল। বিপ্লবীদের মিটিং মিছিল হলে এই খেদু বাবু তাদের তেলেভাজা সরবরাহ করতেন। তেলেভাজা সরবরাহ করার কারনটা খুবই সোজা, তাকে আলাদা করে কোনো দলের সাথে বিশেষ সম্পর্ক পাতাতে হয় নি এর জন্য, জায়গাটা হাতিবাগান চত্বর, সামনে স্কটিশ চার্চ স্কুল, কলেজ, বেথুন স্কুল, কলেজ, হেদুয়ার ঝিল ইত্যাদি। ভালো তেলেভাজা ভাজতেন বলে লোকের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। তখনকার স্কুল কলেজে যাওয়া যুব সমাজ যারা বিশেষত স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিল তাদের সাথে এই খেদুবাবু আর তার ছেলে লক্ষ্মী নারায়নের ভাব জমে গেছিল। মিটিং হলেই, তা সে গোপনই হোক আর সর্বসমক্ষে হোক তাদের কাছ বরাত যেত তেলেভাজা মুড়ির। 1925 সাল নাগাদ এরকম এক গোপন মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি। অখন্ড ভারতের জননায়ক, ব্রিটিশদের নাকে দড়ি পড়িয়ে ঘোরানো একজন মানুষকে তারা দেখেছিলেন চাক্ষুস বক্তৃতা রাখতে আর দেখেই মানুষটির অন্ধ ভক্ত হয়ে যায় পিতপুত্র। এরপরে মাঝে মধ্যে নেতাজি এসে তাদের দোকানে তেলেভাজা খেয়ে গেছেন বলে তারা দাবি করেন। 1942 সাল থেকে খেদু বাবু আর তার ছেলে 23শে জানুয়ারি তাদের বন্ধুবান্ধবদের তেলেভাজা খাইয়ে আসছেন নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষ্যে। আর দেশ স্বাধীন হবার পর 1948 সাল থেকে প্রতি বছর 23শে জানুয়ারি সকাল 8টা থেকে দুপুর 3টে অবধি বাচ্চাদের দুটো করে আর বড়দের চারটে করে চপ ওনারা আজও খাইয়ে আসছেন সবাইকে।
স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল: বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় লাগোয়া ভবানী দত্ত লেন। এখানেই ৮/২ এ আছে স্বাধীন ভারত হিন্দু হোটেল। বর্তমানে কলকাতার বড় পাইস হোটেলগুলোর এটা একটা। দোকানটি 1928 সালে মানোগোবিন্দ পান্ডা প্রতিষ্ঠা করেন। তখন নাম ছিল শুধু "হিন্দু হোটেল"। চোরাগোপ্তা হামলা, ঝামেলা সৃষ্টি এগুলো তকজন লেগেই থাকতো, আর তার পরিকল্পনা হতো এরকম জায়গায়। যা সাধারণ মানুষদের ভাবনারও বাইরে। নেতাজি এখানে বহুবার এসেছেন কাজের সূত্রে, মিটিংয়ের সাথে চলেছিল খাওয়া দাওয়াও। আজও ওনারা আগের মত এখানে কলাপাতা আর মাটির ভাঁড়ে খাবার পরিবেশন করে থাকেন।
ফেভারিট কেবিন: এবারে আসা যাক 69B, সূর্যসেন স্ট্রিটের ফেভারিট কেবিনে। 1918 সালে চট্টগ্রাম থেকে দুই ভাই গৌর চন্দ্র বড়ুয়া আর তার ভাই নতুন চন্দ্র বড়ুয়া কলকাতায় এসে শুরু করেন এই ফেভারিট কেবিন। একটা সময় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আসতেন এখানে নিয়মিত এবং বসতেন সবসময় চার নম্বর টেবিলে। এখানেই নেতাজি বারকয়েক এসেছিলেন নজরুল ইসলামের সাথে দেখা করতে। একটা সময় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায় এখানে নিয়মিত আসতেন। চিনির দাম বাড়ায় চায়ের দাম 25পয়সা বাড়ানোয় ওনারা খবরের কাগজে চিঠি লিখে এর বিরোধিতা করেন। শেষদিকে চা, বিস্কুট, পানকেক (প্যান নয়, পানের মতো দেখতে লোকাল বেকারির কেক), পাউরুটি টোস্ট, মাখন টোস্ট পাওয়া যেত। এই লকডাউনে সেটাও শুনলাম বন্ধ হয়ে গেছে। 
প্যারামাউন্ট: গরমকালে কলেজস্ট্রিটে কেউ যদি বই কিনতে যায়, তাহলে আমরা একটা বাজি ধরতে পারি তাকে নিয়ে। সে বই কেনার আগে প্যারামাউন্টের শরবত খাবে! না বই কিনে শরবত খাবে। এই শরবত খাওয়ার শুরুটা 1918 সাল থেকে। তখন নাম ছিল প্যারাডাইস। পরে নাম বদলে হয় প্যারামাউন্ট। এই শতাব্দী প্রাচীন শরবতের দোকানে বহু প্রজন্মের মানুষ এসে শরবত খেয়ে গেছেন। প্যারামাউন্টে গেলে সেই নামের লিস্ট পড়লে সেই আন্দাজ পাওয়া যায়। এই প্যারামাউন্ট সাক্ষী আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের। 1918, এই সময়ে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের দর্শনের ছাত্র। তখন থেকেই তার এখানে আশা যাওয়া লেগে থাকতো, তবে শরবত খেতে নয়। বিখ্যাত অনুশীলন সমিতির কাজের জন্য। সামনে চলত শরবতের দোকান আর পেছনে চলত বৈপ্লবিক কর্মকান্ড। আর এই কর্মকান্ডে যোগ দিতে নেতাজি এখানে বহুবার এসেছিলেন। মাঝখানে ব্রিটিশরা এই দোকান বন্ধ করে দেয়, পরে আবার শুরু হয়। প্যারামাউন্টকে আমরা মূলতঃ চিনি তার ডাব শরবতের জন্য। এই ডাব শরবতেরও একটা বড় ইতিহাস আছে। এই ডাব শরবতের ফর্মুলা কিন্তু বানিয়েছিলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। প্যারামাউন্টের প্রতিষ্ঠাতা নীহাররঞ্জন মজুমদারকে তিনি বলেছিলেন এমন এক শরবত বানাতে যা খেলে লোকের পেটও ভরবে আবার তৃষ্ণাও মিটবে। তারপরই তিনি নিজে এই ডাবের শরবতের রেসিপি নীহাররঞ্জন বাবুকে দেন আর সেই থেকে প্যারামাউন্টের ডাবের শরবত আজও চলছে।

Comments

Popular Posts